উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগ
বিভাগীয় প্রধানের নাম ও পদবীঃ ড. সাকিনা খানম, মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
বিভাগীয় প্রধানের ছবিঃ
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিনা) উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগ অন্যতম প্রধান গবেষণা বিভাগ হিসেবে কাজ করছে। উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানীগণ গাছের দৈহিক গঠন, শারীরতাত্ত্বিক এবং বিপাকীয় সীমাবদ্ধতা খুঁজে বের করে ফসলের অধিক ফলন এবং স্ট্রেস (খরা, লবণাক্ততা, তাপমাত্রা ইত্যাদি) সহ্য ক্ষমতা বিষয়ক গবেষণা করে ফসল উন্নয়নে মানদণ্ডের সুপারিশ করে থাকেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে পরিবেশগত স্ট্রেস সহ্য ক্ষমতা সম্পন্ন জাত/মিউট্যান্ট সনাক্তকরণের গবেষণায় অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। ফসলের জাত উন্নয়নে উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব এবং উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের বিজ্ঞানীগণ ফসলের বৈশিষ্ট্য, জৈব রাসায়নিক ও গুনাগুণ সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা সমূহের তথ্যাবলি আদান প্রদান করে থাকেন। ফসলের ফলন বৃদ্ধির জন্য ফসলের অবয়বগত বৈশিষ্ট্যের উন্নয়ন করে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের গ্রহণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সালোক-সংশ্লেষণ ক্ষমতার উন্নয়ন করে থাকে। ফসলের স্ট্রেস গবেষণায় ফসলের অবয়ব, এ্যানাটমি, রাসায়নিক বিশ্লেষণ ও মলিকুলার পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া শস্যের পুষ্টিমান বিশ্লেষণের কাজ রয়েছে।
উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের ম্যান্ডেট
গবেষণা সাফল্য
উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানীগণ গাছের দৈহিক গঠন, শারীরতাত্ত্বিক এবং বিপাকীয় সীমাবদ্ধতা খুঁজে বের করে ফসলের অধিক ফলন এবং স্ট্রেস (খরা, লবণাক্ততা, তাপমাত্রা ইত্যাদি) সহ্য ক্ষমতা বিষয়ক গবেষণা করে ফসল উন্নয়নে মানদণ্ডের সুপারিশ করে থাকেন। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে পরিবেশগত স্ট্রেস সহ্য ক্ষমতা সম্পন্ন জাত/মিউট্যান্ট সনাক্তকরণের গবেষণায় অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। ফসলের জাত উন্নয়নে উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব এবং উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের বিজ্ঞানীগণ ফসলের বৈশিষ্ট্য, জৈব রাসায়নিক ও গুনাগুণ সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা সমূহের তথ্যাবলি আদান প্রদান করে থাকেন। শারীরতাত্ত্বিক গবেষণার ফলাফল যাচাইয়ের মাধ্যমে এ বিভাগের বিজ্ঞানীগণ ইতোমধ্যে ফসলের নয়টি জাত উদ্ভাবন করেছেন। উদ্ভিদশারীরতত্ত্ব বিভাগের গবেষণা সাফল্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে দেয়া হলোঃ
ফসলের জাত উদ্ভাবন
সুগন্ধি ধানের জাতঃ
১. বিনাধান-১৩
দেশীয় সুগন্ধি আমন ধানের জাত কালিজিরায় গামা রেডিয়েশন ও ধুতুরা বীজের নির্যাস প্রয়োগের মাধ্যমে একটি সুগন্ধি মিউট্যান্ট KD5-18-150 নির্বাচন করা হয়। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফলন ও অন্যান্য গুণাবলী পরীক্ষায় সন্তোষজনক হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৩ সালে এই মিউট্যান্টটি আমন মৌসুমে সারা দেশব্যাপী চাষাবাদের জন্য বিনাধান-১৩ নামে অনুমোদন লাভ করে। পরিপক্ক অবস্থায় গাছের পাতা সবুজ থাকে। শীষের প্রায় সবগুলো দানাই পুষ্ট হয়। গাছ হেলে পড়ে না। ধান উজ্জ্বল কাল বর্ণের, বীজাবরণ শক্ত ও পুরু। জীবনকাল ১৩৮-১৪২ দিন। ফলন হেক্টর প্রতি ৩.২-৩.৬ টন। পূর্ণ বয়স্ক গাছের উচ্চতা ১৪০-১৪৫ সে.মি.। ১০০০ ধানের ওজন ১৩.২০ গ্রাম। প্রচলিত সুগন্ধি আমন ধানের মাতৃজাত কালিজিরার তুলনায় বিনাধান-১৩ সামান্য খাট, কাণ্ড শক্ত এবং মোটা। ধান ও চাল কালিজিরার তুলনায় সামান্য মোটা ও কম সূচালো। পরিপক্ক অবস্থায় গাছের পাতা সবুজ থাকায় শীষের প্রায় সব দানাই সঠিকভাবে পরিপুষ্ট হয়। কালিজিরার তুলনায় বিনাধান-১৩ অধিক উজ্জ্বল, কাল বর্ণের, বীজাবরণ শক্ত ও পুরু। কালিজিরার চেয়ে ৫ দিন পরে এ জাতের শীষ বের হলেও দানা গঠন ও পরিপক্ক হতে ৩ দিন কম সময় লাগায় প্রায় একই সময় ফসল কাটা যায়।
ডাল ফসলের জাতঃ
২. বিনামসুর-৩
L-5 নামক একটি স্থানীয় জাতের বীজে ইথাইল মিথেন সালফোনেট (ইএমএস) প্রয়োগ করে এর বংশগতি ধারায় স্থায়ী পরিবর্তন এনে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। ২০০৫ সালে এ জাতটি বিনামসুর-৩ নামে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক নিবন্ধন করা হয়। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৩৪-৩৮ সে.মি.। কাণ্ড মধ্যম শাখা বিশিষ্ট, গোড়া গোলাপী বর্ণের ও গাছ খাড়া, পাতা সবুজ গাঢ় বর্ণের ও আকর্ষীযুক্ত। বীজের আবরণ ধূসর বর্ণের। বিনামসুর-৩ এর জীবনকাল ৯৫-১০০ দিন। ফলন ক্ষমতা ২৪০০ কেজি/হেক্টর এবং গড়ফলন ১৮০০ কেজি/হেক্টর। এক হাজার বীজের ওজন ২০.১১ গ্রাম। বীজে আমীষের পরিমান ২৫% এবং ডালের পরিমাণ ৯০.৬১%। ডাল সহজে সিদ্ধ হয় ও সুস্বাদু। এ জাতটি মরিচা ও গোড়া পঁচা রোগ সহনশীল এবং সল্প মাত্রায় খরা সহিষ্ণু।
৩. বিনামসুর-৪
L-5 নামক একটি স্থানীয় জাতের বীজে ইথাইল মিথেন সালফোনেট (ইএমএস) প্রয়োগ করে এর বংশগতি ধারায় স্থায়ী পরিবর্তন এনে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। ২০০৯ সালে এটি E4M-934 বিনামসুর-৪ হিসেবে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক নিবন্ধন করা হয়। এ জাতের গাছের উচ্চতা ৩৫-৪০ সে.মি.। কাণ্ড মধ্যম শাখা বিশিষ্ট, গোড়া সাদা বর্ণের ও গাছ খাড়া, পাতা গাঢ় সবুজ বর্ণের। বীজের আবরণ ধূসর বর্ণের। বিনামসুর-৪ এর জীবনকাল ৯৬-১০২ দিন। গড় ফলন ১৮০০ কেজি/হেক্টর। এক হাজার বীজের ওজন ২১.৩০ গ্রাম। বীজে আমীষের পরিমান ২৫% এবং ডালের পরিমাণ ৯০.৬০%। এ জাতটি মরিচা ও গোড়া পঁচা রোগ সহনশীল এবং খরা সহিষ্ণু হিসেবে বরেন্দ্র এলাকায় চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী।
৪. বিনামসুর-১২
বারিমসুর-৬ এর বীজে ২৫০ গ্রে মাত্রার গামা রশ্মি প্রয়োগ করে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। ২০২১ সালে কৃষক পর্যায়ে আবাদের জন্য এ জাতটি নিবন্ধন করা হয়। এ জাতটি গোড়াপঁচা, মরিচারোগ প্রতিরোধী, খরাসহিষ্ণু এবং উচ্চ ফলনশীল। গাছের উচ্চতা ৩৮-৪২সে.মি.। গাছ খাড়া, কান্ড ৫-৭ টি শাখাবিশিষ্ট, গোড়া সাদাটে ও পাতা গাঢ় সবুজ বর্ণের। ডাল সহজে সিদ্ধ হয় এবং খেতে সুস্বাদু। ১০০০ বীজের ওজন ২১.৮গ্রাম এবং প্রোটিন ৩০%। জীবনকাল ৯৫-১০০ দিন। যথোপযুক্ত পরিচর্যায় হেক্টর প্রতি ২.৭ টন ফলন পাওয়া যায়।
৫. বিনামুগ-৭
বিনামুগ-২ এর বীজে রাসায়নিক মিউটাজেন, ইথাইল মিথেন সালফোনেট (ইএমএস) দ্রবণ প্রয়োগ করে মিউটেশন পদ্ধতির মাধ্যমে বংশগতি ধারায় স্থায়ী পরিবর্তন এনে একটি মিউট্যান্ট E4I-901 উদ্ভাবন করা হয়, যা ২০০৫ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বিনামুগ-৭ হিসেবে দেশব্যাপী কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের জন্য নিবন্ধন লাভ করে।
৬. বিনামুগ-১১
বারিমুগ-৬ এর বীজে গামা রশ্মি (৪০০ গ্রে) প্রয়োগ করে পরবর্তী বছর গুলোতে বাছাই ও বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে গ্রীষ্মকালীন চাষ উপযোগী উন্নত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন বিনামুগ-১১ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এমএম-৫ মিউট্যান্টটি উন্নত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন জাত হিসেবে খরিফ-১ মৌসুমে দেশব্যাপী কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের লক্ষ্যে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বিনামুগ-১১ নামে ২০২১ সালে নিবন্ধন লাভ করে। গাছের উচ্চতা ৪৪-৪৮সে.মি., জীবনকাল ৬৩-৬৫দিন, ৮৫-৯০% ফল একই সঙ্গে পাকে, বীজের আকার বড় (১০০০ বীজের ওজন ৪২.৯৩গ্রাম), বীজের রং সবুজ, পাতা গাঢ় সবুজবর্ণের, বীজে আমীষের পরিমান ২২.৪%, হলুদ মোজাইক ভাইরাস ও সার্কোস্পোরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন, খরা এবং উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল।
টমেটোর জাতঃ
৭. বিনাটমেটো-৬
উচ্চ ফলনশীল বিনাটমেটো-৬ বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে স্থানীয় আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়। বিনাটমেটো-৬ এর গাছে উচ্চতা ৮৫-৯০ সে.মি., প্রতিটি গাছে ফলের ছড়ার সংখ্যা ১০-১২ টি এবং প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ৩০-৩৫ টি। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৫৫ গ্রাম এবং গড় ফলন শীতকালে ৮৫ টন/হেক্টর এবং গ্রীস্মকালে ৪০ টন/হেক্টর। ফলের আকার গোলাকার এবং বোটার বিপরীত দিকে সামান্য সূঁচালো এবং পরিপক্ক অবস্থায় ফলের রং লাল। ভিটামিন-সি (পরিপক্ক ফলে) এর পরিমাণ ১৯.৪ মিলি গ্রাম/১০০ গ্রাম। ঘরে সাধারণ তাপমাত্রায় ফল ২৫-৩০ দিন সংরক্ষণ করা যায়। ফল মাঝারী আকারের, মাংসল ও সুস্বাদু। জীবনকাল ১২০-১২৪ দিন এবং বিনাটমেটো-৬ সারা বছর চাষ করা যায়।
৮. বিনাটমেটো-৭
উচ্চ ফলনশীল বিনাটমেটো-৭ বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১১ সালে স্থানীয় আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়। বিনাটমেটো-৭ এর গাছে উচ্চতা ৮০-৮৫ সে.মি., প্রতিটি গাছে ফলের ছড়ার সংখ্যা ১০-১৩টি এবং প্রতি গাছে ফলের সংখ্যা ২৫-৩০ টি। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ৬০ গ্রাম এবং গড় ফলন শীতকালে ৮৭ টন/হেক্টর এবং গ্রীস্মকালে ৪৩টন/হেক্টর। পরিপক্ক অবস্থায় ফলের রং লাল ও গোলাকার। ভিটামিন-সি (পরিপক্ক ফলে) এর পরিমাণ ২২.৪৩ মিলি গ্রাম/১০০ গ্রাম। ঘরে সাধারণ তাপমাত্রায় ফল ২০-২৫ দিন সংরক্ষণ করা যায়। ফল মাংসল ও সুস্বাদু। জীবনকাল ১২০-১২৪ দিন এবং বিনাটমেটো-৭ সারা বছর চাষ করা যায়।
৯. বিনাটমেটো-১৩
বিনাটমেটো-৭ জাতের বীজে গামা রশ্মি প্রয়োগ করে উন্নত চারিত্রিক গুণাবলী বিশিষ্ট নতুন একটি মিউট্যান্ট লাইন (TM-5) সনাক্ত করা হয়। তারপর গবেষণার এবং বিভিন্ন কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে কৃষকের মাঠে ৪-৫ বছর যাবৎ ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও তুলনামূলক মূল্যায়ন করা হয়। এ মিউট্যান্টটিকে বিনাটমেটো-১৩ নামে ২০১৮ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক শীতকালে দেশব্যাপী চাষাবাদের জন্য ছাড় করা হয়েছে। জাতটি শীতকালীন এবং বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়। গাছের উচ্চতা ১২০-১৩০ সে.মি.। ফলের আকার গোলাকার এবং বোটার বিপরীত দিকে সামান্য সূঁচালো। ফলের ওজন ৬০-৬৫ গ্রাম এবং পরিপক্ক অবস্থায় ফলের রং লাল। হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ ফলন ১০৪ টন এবং গড় ফলন ৮৭ টন। জীবনকাল ১২০-১২৫ দিন।
আইসোটোপিক গবেষণার সাফল্য
ফসলের সঠিক পুষ্টি চাহিদা নিরূপণের অভাবে ভূলভাবে সার প্রয়োগ করা হয় যা গাছের বিপাকীয় কার্যক্রমের ব্যাঘাত ঘটায়, ফলে ফলন ব্যাপক ভাবে হ্রাস পায়। এ প্রেক্ষিতে বিনা’র উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানীগণ কর্তৃক জিঙ্ক আইসোটোপ প্রয়োগের মাধ্যমে মাটিতে জিঙ্ক এর অভাব প্রথম সনাক্ত করা হয় এবং হেক্টর প্রতি ৫ কেজি জিঙ্ক প্রয়োগের সুপারিশ করা হয়, যা সামান্য পরিবর্তিতভাবে অদ্যাবধি ব্যবহ্রত হচ্ছে। এ ছাড়া সালফার আইসোটোপ প্রয়োগের মাধ্যমে বিনাছোলা-৩ চাষে হেক্টর প্রতি ৩০ কেজি সালফার প্রয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে।
ফসলের স্ট্রেস সহ্যক্ষমতা বিষয়ক গবেষণার সাফল্য
পরিবেশগত স্ট্রেস যথা খরা, লবণাক্ততা, তাপমাত্রা ইত্যাদি ফসলে বিরূপ প্রভাব ফেলে। উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের বিজ্ঞানীগণ শারীরতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে ফসলের খরা, লবণাক্ততা, তাপমাত্রা ইত্যাদি সহ্যক্ষমতা নিরূপণ করে থাকে। তদানুসারে, ধানের তিনটি জাত যথা বিনাশাইল, ইরাটম-২৪ এবং বিনাধান-১৩, ছোলার একটি জাত, হাইপ্রোছোলা, মুগের দু’টি জাত বিনামুগ-২ এবং বিনামুগ-৫, মসুরের জাত বিনামসুর-৪ এবং টমেটোর দু’টি জাত বিনাটমেটো-৬ এবং বিনাটমেটো-৭ মধ্যম খরা সহ্য ক্ষমতা সম্পন্ন (৪০% ফিল্ড ক্যাপাসিটি) হিসেবে সনাক্ত করা হয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা ফলাফলের মাধ্যমে জানা যায় যে, মসুরের জন্য ৫০-৬০%, ছোলা এবং মুগের জন্য ৬০-৮০%, সরিষার জন্য ৭০-৮০% এবং খেসারীর জন্য ৮০-১০০% ফিল্ড ক্যাপাসিটিতে গাছের উত্তম বৃদ্ধি এবং ভাল ফলন পাওয়া যায়। শারীরতাত্ত্বিক গবেষণার মাধ্যমে জানা গেছে, ৮ ডেসি সিমেন পর্যন্ত লবণাক্ততায় বিনাসরিষা-৫ এবং বিনাসরিষা-৬, ৫ ডেসি সিমেন পর্যন্ত লবণাক্ততায় বিনাতিল-১, বিনামুগ-৫ বিনামুগ-৭, বিনাটমেটো-৬ এবং বিনাটমেটো-৭ গ্রহণযোগ্য ফলন দেয়। বিনাধান-৬ ধানের দানা গঠন ও বৃদ্ধি পর্যায়ে ৩০০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। বিনাধান-৭, বিনাধান-১৩ এবং ইরাটম-২৪ এর উচ্চ এবং নিম্ন তাপমাত্রা সহ্যক্ষমতা মধ্যম ধরনের, বিনামসুর-১২ খরা সহিষ্ণু এবং বিনামুগ-১১ উচ্চ তাম্পাত্রা ও খরা সহিষ্ণু।
ফলন বৃদ্ধিতে ফসলে কিটোসেনের ব্যবহার
কিটোসেন একটি প্রাকৃতিক পলিস্যাকারাইড বায়োপলিমার যা চিংড়ি ও কাকড়ার খোসা এবং ছত্রাকের কোষ প্রচিীরে পাওয়া যায়। ইহা প্রধানত: ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে উদ্ভিদ এবং উদ্ভিজ্ব ফলনকে রক্ষার জন্য গাছের প্রতিরোধ ক্ষমতা উজ্জিবিত করতে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশন হতে কিটোসেন সংগ্রহ করা হয়। গ্রীষ্ম ও শীতকালীন টমেটো, ভূট্টা এবং গ্রীষ্মকালীন মুগের উপর কিটোসেন প্রয়োগের মাধ্যমে ফলন বৃদ্ধিতে এর প্রভাব এবং উপযুক্ত মাত্রা নির্ধারনের জন্য বিনার উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। ইহা ফসলের গ্রোথ, ফুল, ফল বা দানার সংখ্যা বৃদ্ধি করে ফলন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। টমেটো: মাঠে চারা লাগানোর ২৫-৩০ দিন পর ১ বার এবং ফুল আসার সময় ১ বার ৭৫ পিপিএম মাত্রায় কিটোসেন টমেটো গাছে স্প্রে করে পাতা ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। ভূট্টা: মাঠে ভূট্টা বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর ১ বার, ৪০-৪৫ দিন পর আরও ১ বার এবং ফুল আসার সময় ১ বার ১০০ পিপিএম মাত্রায় ভালভাবে স্প্রে করে প্রয়োগ করতে হবে। মুগ: মুগ বীজ বপনের ২৫-৩০ দিন পর ১ বার এবং ফুল আসার সময় ১ বার ৫০ পিপিএম মাত্রায় ভালভাবে স্প্রে করে প্রয়োগ করতে হবে। কিটোসেন প্রয়োগের ফলে উচ্চ ফলনশীল জাতের টমেটোতে ১২-১৪%, ভূট্টাতে ১০-১৫% এবং মুগবীনে ১৫-২০% ফলন বৃদ্ধি পায়।
উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের জনবল
ক্রমিক নং |
নাম |
পদবি |
১. |
ড. সাকিনা খানম |
মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বিভাগীয় প্রধান |
২. |
ড. মোঃ বাবুল আকতার |
প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা |
৩. |
ড. মাহবুবা খাতুন |
এসএসও |
৪. |
সৈয়দ ইশতিয়াক আকতার |
এসও |
৫. | অর্পিতা সেন | এসও |
৬. |
মোঃ শওকতুল ইসলাম |
ইও |
৭. |
মোঃ রফিকুল ইসলাম |
এসএ-১ |
৮. |
আয়েশা সিদ্দীকা |
এসএ-১ |
৯. |
মোছাঃ হেলেনা আক্তার |
এফএ |
আন্তর্জাতিক কার্যক্রম
আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (IAEA) কর্তৃক উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগের কয়েকজন বিজ্ঞানী বিভিন্ন মেয়াদে ফেলোশীপ পেয়েছেন। Japanese Society of Plant Physiologists (JSPP), American Society of Plant Biology (ASPB) এবং Tropentag এর আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ।