জাতের নামঃ |
বিনা পিঁয়াজ২ |
জাতের বৈশিষ্ট্যঃ |
একবর্ষজীবী অর্থাৎ এটি একই বছরে বীজ থেকে বীজ উৎপাদন করতে পারে। খরিফ-১ মৌসুমের উপযোগী গ্রীষ্মকালীন পিঁয়াজের জাত। জীবনকাল ২১০-২১৫ দিন (বীজ থেকে বীজ) এবং কন্দ উৎপাদনের জন্য ১০৫-১১০ দিন (সরাসরি বপন) এবং ১১৫-১২০ দিন (চারা রোপন) । কক্ষ তাপমাত্রায় এটি ২.০ মাস বা তার বেশি সময় পর্যমত্ম সংরক্ষণ করা যায়। প্রতিটি গাছে পাতার সংখ্যা ৫-৬ টি। প্রতিটি শল্ককন্দের ওজন (বাল্ব) ১৪-১৯ গ্রাম। গাছের উচ্চতা ৩৮-৪২ সে. মি.। কন্দের আকৃতি ও রংগোলাকার লালচে বর্ণের ও গলা লম্বাটে। কন্দের ফলন গড়ে ৮.৬৮ টন/হে.; বীজের ফলন গড়ে ৬৯৮ কেজি/ হে.। |
জমি ও মাটিঃ |
পলি, বেলে-দোআঁশ, পলি-দোআঁশ মাটি পিঁয়াজ চাষের জন্য উপযোগী। তবে সেচ ও পানি-নিষ্কাষনের ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে। |
জমি তৈরিঃ |
৪-৫ টি চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। আগাছা থাকলে তা উপরে ফেলতে হবে, মাটির ঢেলা থাকলে ভেঙে ফেলতে হবে ও সমান করে জমি তৈরি করতে হবে। |
বীজ বপন/ এবং রোপণের সময়ঃ |
(১) বীজ সরাসরি বপন, (২) সেট রোপন এবং (৩) বীজতলায় চারা তৈরি করে পরে ডগা কেটে রোপণ। তবে সরাসরি বপন করলে জীবনকাল ৫-১০ দিন কমে আসে। এক্ষেত্রে চারা টিকে যাওয়ার পর প্রয়োজনীয় সংখ্যক রেখে বাকিগুলো উঠিয়ে পাতলা করে দিতে হয়। চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ১০ সেমি (৪ ইঞ্চি) এবং লাইন থেকে লাইন ১৫ সেমি (৬ইঞ্চি) দূরে থাকতে হবে। |
বীজ হারঃ |
হেক্টরে ৩-৪ কেজি তবে সরাসরি বপনে ৬-৭ কেজি। |
বীজ ও বীজতলা শোধনঃ |
বীজ বপনের পূর্বে শোধন করে নেওয়া ভাল। বীজ শোধনের জন্য ২ গ্রাম ব্যাভিষ্টিন প্রতি কেজি বীজের সাথে মিশাতে হবে। মাটি শোধনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ৪ গ্রাম হারে কপার ব্লু মিশিয়ে অথবা বীজতলার উপর ১০ সেন্টিমিটার (৪ ইঞ্চি) পুরু করে কাঠের গুড়া/ খড় বিছিয়ে আগুন জ্বালাতে হবে। |
সেচ ও পানি নিষ্কাষনঃ |
পিঁয়াজের জীবনকালে ৮-১০ বার পানি সেচের প্রয়োজন হয়। তবে গ্রীষ্মকালে ও হালকা মাটিতে এঁটেল মাটি অপেক্ষা বেশি পানির প্রয়োজন হয়। এছাড়া চারা লাগানোর পর হতে জমিতে প্রতিষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত ৩-৪ দিন পর পর পানি সেচ দিতে হবে। কন্দ গঠিত হয়ে গেলে পানি সেচ কম লাগে। কন্দ পরিপক্ক হয়ে গেলে ফসল কর্তনের পূর্বে পানি সেচ বন্ধ করে দিতে হবে। জমিতে পানি জমে থাকা পিঁয়াজের জন্য ক্ষতিকর। এজন্য উঁচু, পানি নিষ্কাষনের ভালো ব্যবস্থা আছে এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। খরিফ মৌসুমে পিঁয়াজ চাষের জন্য জমি থেকে ৩০ সেমি ( ১ফুট) উঁচু বেড করে চারা লাগাতে হবে। এতে বৃষ্টি হলেও চারার ক্ষতি হবে না। |
আগাছা দমনঃ |
আগাছা পিঁয়াজ গাছের বৃদ্ধির জন্য অন্তরায় সৃষ্টি করে। এরা জমির রস ও খাদ্য উপাদান গ্রহণ করে কন্দ ও গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত করে। সাধারণত সার প্রয়োগ ও পানি সেচের পর জমিতে প্রচুর আগাছা দেখা যায়। এ সময় নিড়ানি দিয়ে জমি আলগা ও আগাছামুক্ত করা দরকার। নিড়ানি ব্যবহারের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন কন্দের গাঁয়ে আঘাত না লাগে। |
বালাই ব্যবস্থাপনাঃ |
রোগবালাই খরিফ-১ মৌসুমে অর্থাৎ কন্দ উৎপাদন মৌসুমে এ জাতে তেমন কোন পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই এর আক্রমন পরিলক্ষিত হয়না। তবে শীতকালে বীজ উৎপাদনে অনেক রোগ ও পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয়ে থাকে। এগেুলোর বর্ণনা ও তার দমন ব্যবস্থা নিন্মরূপ:
পার্পল ব্লচ (Purple Blotch) Alternaria porri ও Stemphylium botryosum নামক ছত্রাক দ্বারা এই রোগ হয়ে থাকে। বাতাস, আক্রান্ত বীজ ও গাছের মাধ্যমে এটি ছড়ায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে এর প্রকোপ বাড়ে। প্রাথমিক পর্যায়ে পাতা ও পুষ্পদন্ডে পানিভেজা দাগ দেখা যায়। পরবর্তিতে দাগগুলো ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। অনুকূল পরিবেশে আরও দ্রুত ছড়ায়। দাগের মধ্যবর্তী অংশে প্রথমে লালচে ও পরে কালো বর্ণ ধারণ করে এবং দাগের কিনারায় বেগুনী রং দেখা যায়। আক্রান্ত পাতা ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যে মারা যায়। পুষ্পদন্ডে আক্রমণ হলে তা ভেঙে যায় এবং বীজ উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়।
প্রতিকার
কান্ড পচা (Leaf Blight) Sclerotium rolfsii ও Fusarium sp. ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এ ছত্রাক দুটি মাটিবাহিত। মাটির আর্দ্রতা যথেষ্ঠ থাকলে ও তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। সেচের পানি দ্বারা পার্শ্ববর্তী জমির সুস্থ গাছ আক্রান্ত হতে পারে। Sclerotium rolfsii দ্বারা আক্রান্ত গাছ হাত দিয়ে টান দিলে পিঁয়াজসহ খুব সহজেই মাটি থেকে উঠে আসে। আক্রান্ত স্থানে সরিষার দানার মতো বাদামী রং এর গোলাকার স্কেলেরোসিয়াম দেখা যায়। ফিউজারিয়াম দ্বারা আক্রান্ত গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায় কিন্তু টান দিলে সহজেই উঠে আসে না।
প্রতিকার
পোকামাকড়
থ্রিপস পোকা (Thrips) এ পোকা আক্রান্ত পাতায় রূপালী রং এর অথবা বাদামী দাগ দেখা যায়। এর পরবর্তিতে পাতা শুকিয়ে বিকৃত হয়ে যায় এবং ঝরে পড়ে।
প্রতিকার
|
ফলনঃ |
বাল্বের ফলন গড়ে ৮.৬৮ টন/হে.; বীজের ফলন গড়ে ৬৯৮ কেজি/হে.। |
প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন পিঁয়াজ বিশেষজ্ঞ |
(সকাল ৯ টা-বিকাল ৫টা) কল করুন: +৮৮০১৭১০৭৬৩০০৩ ই-মেইল: makazad.pbdbina@yahoo.com দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম ও পদবী ড. মো. আবুল কালাম আজাদ মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ বিনা, ময়মনসিংহ-২২০২ |
চিত্র: বিনা পিঁয়াজ২