জাতের নামঃ |
বিনাধান-৮ |
জাতের বৈশিষ্ট্যঃ |
একটি লবন সহিষ্ণু, উচ্চ ফলনশীল, আলোক অসংবেদনশীল ও উন্নত গুনাগুন সম্পন্ন বোরো ধানের জাত। জীবনকাল ১৩০-১৩৫ দিন। কুশি অবস্থা থেকে পরিপক্কতা পর্যন্ত ৮-১০ ডিএস/মিটার এবং চারা অবস্থায় ১২-১৪ ডিএস/মিটার মাত্রার লবণাক্ততা সহনশীল। |
জমি ও মাটিঃ |
দেশের লবণাক্ত ও অলবণাক্ত উভয় এলাকায় এ জাতটি চাষের উপযোগী। তবে অলবণাক্ত এলাকায় ফলন কিছুটা বেশি পাওয়া যায়। বেলে দো-আঁশ এবং এটেল দো-আঁশ জমি এ জাতটি চাষের উপযোগী। |
জমি তৈরীঃ |
জাতটির চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য উফশী রোপা বোরো জাতের মতই। |
বপণের সময়ঃ |
এ জাতের বীজ নভেম্বর মাসের ১ম সপ্তাহ হতে শুরু করে ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত বীজতলায় ফেলার উপযুক্ত সময়। পাঁচ শতাংশ (২০০ বর্গ মিটার) পরিমাণ বীজতলায় ১০ কেজি বীজ ফেলা যায়। |
বীজ হার ঃ |
প্রতি হেক্টর জমি চাষের জন্য ২৫-৩০ কেজি বা এক একর জমির জন্য ১০-১২ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়। |
বীজ শোধনঃ |
উপযুক্ত ফলন নিশ্চিত করতে হলে পুষ্ট ও রোগবালাই মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। প্রতি ১০ কেজি বীজ শোধনের জন্য ২৫ গ্রাম ভিটাভ্যাক্স-২০০ ব্যবহার করলে ভাল হয়। |
সার ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ |
প্রতি হেক্টরেঃ বীজতলার জন্যঃ উর্বর ও স্বল্প উর্বর জমিতে বীজতলা তৈরী করলে কোন রূপ সার প্রয়োজন হয়না। অনুর্বর ও স্বল্প উর্বর জমিতে কেবল দুই কেজি পঁচা গোবর বা আবর্জনা সার প্রয়োগ করলেই চলে। চারা গজানোর পর গাছ হলুদ হয়ে গেলে দু’সপ্তাহ পর প্রতি বর্গ মিটারে ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের পর জমি থেকে পানি নিষ্কাশণ করা যাবেনা। রোপা ক্ষেতেরজন্যঃ ইউরিয়াঃ ২১০-২৩০ কেজি, টিএসপিঃ ১১০-১২০ কেজি, এমওপিঃ ৬০-৮০ কেজি, জিপসামঃ ৪৫-৫০ কেজি ও দসত্মাঃ ৪.০-৪.৫ কেজি। প্রয়োগের নিয়মঃ রোপার জন্য জমি তৈরীর শেষ চাষের আগে সম্পূর্ণ টিএসপি এবং এমওপি জমিতে সমভাবে ছিটিয়ে চাষের মাধ্যমে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সারের অর্ধেক পরিমাণ চারা রোপনের ৭-৮ দিন পর এবং বাকি অর্ধেক ২০-২৫ দিন পর জমির উর্বরতার উপর নির্ভর করে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার প্রয়োগের ২/১ দিন আগে জমির অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে এবং প্রয়োজন হলে আগাছা দমন করতে হবে। জমির উর্বরতা ও ফসলের অবস্থার উপর নির্ভর করে ইউরিয়া সার প্রয়োগমাত্রার তারতম্য করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে টিএসপি ও দসত্মা সার একই সাথে প্রয়োগ করা যাবেনা। তাই এক্ষেত্রে এক চাষ পূর্বে টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে এবং শেষ চাষের সময় ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার ছিটিয়ে প্রয়োগ করা অবশ্যক। |
সেচ ও নিষ্কাশনঃ |
জমি তৈরীর সময় ২/৩ বার স্বাদু পানি দিয়ে লবণাক্ত পানি বের করে দিলে জমির লবণাক্ততা অনেকটা কমে যায়। তাছাড়া কুশি, ফুল আসা ও পরিপক্কতার সময় লবণের মাত্রা ১০ ডিএস/মিটারের বেশী হলে স্বাদু পানি দিয়ে লবণাক্ততা কমিয়ে আনতে হবে। ধান পাকার ১০-১২ দিন আগে জমির পানি শুকিয়ে ফেলা ভাল। |
আগাছা দমন ও মালচিংঃ |
চারা রোপনের পর আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী বা হাতের সাহায্যে আগাছা পরিষ্কার এবং মাটি নরম করতে হবে । |
বালাই ব্যবস্থাপনাঃ |
এ জাতগুলোর রোগ বালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। তবে প্রয়োজনে বালাইনাশক প্রয়োগ করা উচিত। খোল ঝলসানো বা সিথ্বস্নাইট রোগ দেখা গেলে ফলিকুর বা প্রোপিকানাজল (টিল্ট ২৫০ ইসি) ১ মি. লি. বা ব্যাভিস্টিন ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া বাষ্ট রোগ দমনের জন্য ট্রুপার একর প্রতি ১৫০ মিলি হারে ২০০ লিটার পানিতে স্প্রে করা যেতে পারে। পোকামাকড় দমনের জন্য আইপিএম পদ্ধতিই সবচেয়ে ভাল। এ জাতটি মাজরা পোকার প্রতি মধ্যম প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। জমিতে মাজরা পোকা, পাতা শোষক পোকা, ফড়িং বা অন্যান্য পোকার আক্রমণ হলে ডায়াজিনন-১০ (দানাদার) একর প্রতি ৬.৮ কেজি হারে ছিটিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে বা সবিক্রন ৪২৫ ইসি ২০ মি.লি. ১০লিটার পানিতে মিশিয়ে ২০০ বর্গ মিটার (৫ শতাংশ) জমিতে স্প্রে করা যেতে পারে। রোগবালাই ও কীট পতঙ্গের আক্রমণ দেখা দিলে নিকটস্থ কৃষিসম্প্রসারণ কর্মকর্তার উপদেশ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। |
হেক্টর প্রতি ফলনঃ |
লবণাক্ত জমিতে গড় ফলন ৫.০-৫.৫ টন/হেঃ (বোরো মৌসুম) এবং অলবণাক্ত স্বাভাবিক জমিতে গড় ফলন ৭.৫-৮.৫ টন/হেঃ (বোরো মৌসুম) |
প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন ধান ফসল বিশেষজ্ঞ |
(সকাল ৯ টা-বিকাল ৫টা) কল করুনঃ +৮৮০১৭১৬২৮০৭২১ |
চিত্র: বিনাধান-৮ এর মাঠ