ড. মো. আবুল কালাম আজাদ
মহাপরিচালক
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা)
ড. মো. আবুল কালাম আজাদ ২জুন ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এর মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে যোগদান করেন। মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণের পূর্বে তিঁনি অত্র ইনস্টিটিউটের পরিচালক (প্রশাসন ও সাপোর্ট সার্ভিস, গ্রেড-২) পদে ৩০ এপ্রিল ২০২০ তারিখে চলতি দায়িত্ব প্রাপ্ত হন ও ৪ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে সিনিয়র সিলেকশন বোর্ড কর্তৃক উক্ত পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন। পরিচালক (প্রশাসন ও সাপোর্ট সার্ভিস) হিসাবে যোগদানের পূর্বে তিনি প্রায় ২৫ বছর বিনা’র উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে কর্মরত ছিলেন।
ড. মো. আবুল কালাম আজাদ ০১ জুন ১৯৯৪ সালে উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ও একই বিভাগে ২০০১ সালে উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ২০০৯ সালে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে উম্মুক্ত প্রতিযোগীতার মাধ্যমে নিয়োগ লাভ করেন। ২০১৫ সালে তিঁনি বিনা’র বায়োটেকনোলজি বিভাগে একইভাবে মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ লাভ করেন। অল্প সময়ের জন্য উক্ত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসাবেও তিঁনি দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি এ পর্যন্ত ধান, গম, পাট, চিনাবাদাম ও পেঁয়াজের ২৪টি জাত উদ্ভাবনের সাথে প্রধান গবেষক/সহযোগী গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। তাঁর উদ্ভাবিত জাতসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বাশমতি টাইপ প্রিমিয়াম কোয়ালিটির চাল ও স্বল্প জীবনকালসম্পন্ন (১৩৫-১৪৮দিন) উচ্চ ফলনশীল (সর্বোচ্চ ৮.০ টন/হে.) বোরো ধানের জাত বিনা ধান২৫; খরা সহিষ্ণু, স্বল্প জীবনকালসম্পন্ন, উচ্চ ফলনশীল আউশ ধানের জাত বিনাধান-১৯; উচ্চ তাপমাত্রা সহনশীল নাবী বোরো ধানের জাত, বিনাধান-১৪; জিংক ও অয়রন সমৃদ্ধ আমন ধানের জাত বিনাধান-২০; কৃষক ভাইদের কাছে চিনাবাদামের সবচেয়ে জনপ্রিয় জাত বিচিনাবাদাম-৪; লবণ সহিষ্ণু চিনাবাদামের জাত বিনাচীনাবাদাম-6; বিনচিনাবাদাম-৮সহ চিনাবাদামের মোট ১২টি জাত তাঁর হাত দিয়েই এসেছে। বাংলাদেশে তিঁনিই প্রথম লবণ সহিষ্ণু গমের জাত বিনাগম-১ অবমুক্ত করেন। ইন্ডিয়ান জেআরও-৫২৪ নামক তোষা পাটের বীজে গামা রশ্মি প্রয়োগ করে তিঁনিই প্রথম বাংলাদেশের উপযোগী করে বিনা তোষাপাট১ জাতটি উদ্ভাবন করেন। বিনা উদ্ভাবিত গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজের জাত বিনা পিঁয়াজ-১ ও বিনাপিঁয়াজ-২ এর ও তিঁনি উদ্ভাবক।
এছাড়াও তিঁনি মাত্র ৪ (চার) বছরে নতুন ধানের জাত উদ্ভাবনের পদ্ধতি অবিষ্কারসহ যে সমস্ত ফসল শুকনা মাটিতে জন্মায় সে সমস্ত ফসলের লবণাক্ত মাটিতে জন্মানো উপযোগী জাত উদ্ভাবনের পদ্ধতিও আবিষ্কার করেন।
তিঁনিই প্রথম জাতির সামনে উপস্থাপন করেন যে, আমন ও বোরো ধানের মধ্যবর্তী সময়ে জমিতে সরিষা চাষ; ধানের কুড়া হতে ভোজ্য তেল নিষ্কাষণ ও লবণাক্ত জমিতে চিনাবাদাম ও তিল উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলাশেকে ভোজ্য তেলে রপ্তানীকারক দেশ হিসাবে রুপান্তর করা সম্ভব।
এছাড়াও গামা রশ্মি প্রয়োগ করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ, আলুসহ বিভিন্ন ফসলের সংগ্রহোত্তর ক্ষতির সিংহভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তিঁনি মতামত ব্যক্ত করেন। তাঁরই মতামতের ভিত্তিতেই বিনা’র আঞ্চলিক কেন্দ্র, গাজীপুরে ৫০০ কিলো কিউরি ক্ষমতাসম্পন্ন গামা ইরাডিয়েটর যন্ত্র স্থাপিত হতে যাচ্ছে। তাছাড়াও উক্ত কাজের জন্য একই স্থানে ইলেক্ট্রন বিম যন্ত্র স্থাপনের নিমিত্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস এ এন্ড এম বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইলেক্ট্রন বিম রিসার্স সেন্টারের সাথে সম্ভাব্যতা যাচাই এর কাজে ফোকাল পয়েন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তাঁর দেশি-বিদেশি জার্ণালে প্রবন্ধ, বই, কর্মশালা ও সিম্পোজিয়ামের প্রসিডিংস, সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন/দৈনিক পত্রিকায় শতাধিক প্রকাশনা রয়েছে। এছাড়াও তিঁনি মুখ্য/প্রধান ও সহযোগী গবেষক হিসাবে দেশি-বিদেশি ১৫-২০টি প্রকল্প সম্পাদন করেন।
ড. মো. আবুল কালাম আজাদ চাকরি জীবনে পেশাগত প্রশিক্ষণ, কর্মশালা/সিম্পোজিয়াম ও এক্সপার্ট মিশন হিসাবে অস্ট্রিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও হাঙ্গেরি ভ্রমন করেছেন।
বিনা’র পরিচালক (প্রশাসন ও সাপোর্ট সার্ভিস) হিসাবে বিনাতে ৯-১৬ গ্রেডের ১০০ (একশত) এর বেশি কর্মচারীর সরাসরি নিয়োগ ও কেনাকাটার জন্য অসংখ্য টেন্ডার প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সাথে সম্পাদন করেছেন।
ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার মোল্লাপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯৬৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম করম আলী হালাদার ও মাতা মরহুমা মমতাজ বেগম ।
ড. মো. আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ হতে ১৯৮৮ (অনু. ১৯৯১) সালে বিএসসিএজি (সম্মান), ১৯৯৮ সালে কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিষয়ে এমএস ও ২০০৮ সালে একই বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিঁনি এশিয়া-পেসিফিক অঞ্চলের মিউটেশন ব্রিডিং নেটওয়ার্ক (Mutation Breeding Network সংক্ষেপে MBN) এর ফোকাল পয়েন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালনসহ বাংলাদেশ কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন সমিতি, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, সিড সায়েন্স সোসাইটি অব বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ পরিবেশ উন্নয়ন সমিতির আজীবন সদস্য । তিঁনি বাংলাদেশ কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালনসহ বিনা বিজ্ঞানী সমিতির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
উল্লেখ্য, দেশের কৃষি উন্নয়নে তার অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বাংলাদেশ উদ্ভিদ প্রজনন ও কৌলিতত্ত্ব সমিতি কর্তৃক ২০১৫ সালে ইয়ং সায়েন্টিস্ট এওয়ার্ড; ২০১৫ সালে বিনা’র বেস্ট সায়েন্টিস্ট এওয়ার্ড; ২০১৮ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অব এগ্রিকালচার কর্তৃক গোল্ড মেডাল এবং ২০১৯ সালে বিনা কর্তৃক জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার লাভ করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জনক।