জাতের নামঃ
বিনা চিনাবাদাম১২
সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য
জমি ও মাটি
বাংলাদেশের সর্বত্র বিনা চিনাবাদাম১২ চাষ করা যায়। বেলে, বেলে-দোআঁশ, এটেল-দোআঁশ মাটিতে চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
জমি তৈরি
৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ভালো করে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে এবং জমিতে আগাছা থাকলে ভালভাবে পরিষ্কার বা তুলে ফেলতে হবে।
বীজের পরিমাণ ও বপনের সময়
প্রতি হেক্টর জমির জন্য ১৪০-১৪৫ কেজি, প্রতি একরে ৫০-৫৫ কেজি এবং প্রতি বিঘায় ১৫-১৭ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বছরের যেকোন সময় চিনাবাদামের চাষ করা যায় তবে নিম্ন লিখিত সময়ে বপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়।
রবি: পহেলা কার্তিক হতে ১৫ ফাগুণ (মধ্য অক্টোবর হতে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত)
খরিফ-২: এলাকাভেদে ১৫ আষাঢ় হতে ১৫ আশ্বিন (১ জুলাই হতে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত)
বীজ শোধন
বপনের আগে বীজ শোধন করে নিলে ভাল হয়। প্রতি ৪০০ গ্রাম বীজের জন্য ১ গ্রাম প্রোভিটাভ্যাক্স বা অটোস্টিন অথবা নোইন নামক বীজ শোধনকারী ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। শোধিত বীজ জমিতে বপন করলে চারা গজানোর হার বেড়ে যায়। বীজ গজানোর পরে অনেক সময় পিপঁড়া ও পাখি বাদামের দানা ও চারা গাছ উঠিয়ে ফেলে, এ ক্ষেত্রে বীজ বপনের সময় সেভিন ডাস্ট ও ফুরাডান মিশিয়ে বীজ বপন করা ভালো।
বপন পদ্ধতি
বীজ সারিতে বপন করতে হবে। সারি হতে সারির দুরুত্ব হবে ৩০ সে.মি. (১ ফুট) এবং গাছ হতে গাছের দুরত্ব হবে ১৫ সে.মি. (৬ ইঞ্চি) । বীজ গুলো ২.৫৪-৪ সে.মি. (১.০-১.৫ ইঞ্চি) গভীরে বপন করতে হবে।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
শেষ চাষের সময় নিম্নে উল্লেখিত পরিমাণ সার জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
সারের নাম |
হেক্টর প্রতি (কেজি) |
একর প্রতি (কেজি) |
বিঘা প্রতি (কেজি) |
ইউরিয়া |
৪০-৫০ |
১৬-২০ |
৫-৭ |
টিএসপি |
১৬৫-১৭৫ |
৬৭-৭১ |
২১-২৩ |
এমওপি |
১০০-১৫০ |
৪০-৫০ |
১৪-১৭ |
জিপসাম |
১০০-১২০ |
৪৪-৪৯ |
১৪-১৬ |
জিংক সালফেট |
২.৫-৫.০ |
১.০১-২.০২ |
০.৩৭-০.৬৭ |
সলুবোর বোরন |
৩.০-৫.০ |
১.২১-২.০২ |
০.৩৭-০.৬৭ |
মলিবডেনাম |
১.০-১.৫ |
০.৪-০.৬ |
০.১৫-০.২১ |
বি.দ্র. সব জমিতে বোরন, জিংক সালফেট ও মলিবডেনাম প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। যে জমিতে উক্ত সারের অভাব আছে কেবল সেইসব জমিতেই সারের প্রয়োগ করতে হবে। জীবাণুসার প্রতি হেক্টরে ২.২ কেজি বা একরে ১.০ কেজি হারে দিতে হবে। উল্লেখ্য যে, জীবাণু সার ব্যবহার করলে ইউরিয়া সার দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
সেচ ও নিষ্কাশন
বাদামে সাধারণত সেচের প্রয়োজন হয় না তবে মাটি অধিক শুষ্ক হলে বা অতিরিক্ত খরায় গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে একবার পানি সেচের প্রয়োজন হতে পারে।
আগাছা দমন
চিনাবাদাম রোপনের পর গাছ ৩-৪ পাতা বিশিষ্ট হওয়ার পর প্রথম বার এবং ফুল আসার পূর্বে দ্বিতীয় বার আগাছা থাকলে নিড়ানী দিতে হবে ও মাটি আলগা করে দিতে হবে।
ক্ষতিকর রোগ ও পোকামাকড় দমন
পিপিঁলিকা দমন
জমিতে বাদাম লাগানোর পরপর পিপিঁলিকা আক্রমণ করে রোপিত বাদামের দানা সব খেয়ে ফেলতে পারে। এ জন্য বাদাম লাগানো শেষ হলেই ক্ষেতের চারিদিকে সেভিন ডাস্ট ছিটিয়ে দিতে হবে। এছাড়া ক্ষেতের চারিদিকে লাইন টেনে কেরোসিন তেল দিয়েও পিপিঁলিকা দমন করা যায়।
উইপোকা দমন
উইপোকা চিনাবাদাম গাছের এবং বাদামের যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে। এরা বাদাম গাছের প্রধান শিকড় কেটে দেয় এবং শিকড়ের ভিতর গর্ত সৃষ্টি করে। ফলে গাছ মারা যায়। উইপোকা মাটির নিচের বাদামের খোসা ছিদ্র করে বীজ খায়।
প্রতিকার
চিনাবাদামের বিছা পোকা, জ্যাসিড বা পাতা হপার এবং জাব পোকার সমন্বিত দমন ব্যবস্থা
চিনাবাদামের পাতার আগাম দাগ রোগ ও বিলম্বে আসা দাগ রোগ দমন
পাতার আগাম দাগ রোগ সারকোস্পোরা এরাচিডিকোলা নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ সৃষ্ট হয়। আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে এ রোগ রোপনের ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে দেখা দিতে পারে। এ রোগের ফলে পাতার উপরিভাগে গাঢ় বাদামী রং এর উপবৃত্তাকার দাগ এবং পাতার নীচের দিকে হাল্কা বাদামী রং এর ছাপ পড়ে। পাতার যখন রোগের আক্রমন খুব বেশী হয় তখন ছোট ছোট উপবৃত্তাকার দাগ গুলো মিলে বড় দাগের সৃষ্টি হয়ে পাতার সবুজ রং নষ্ট করে ফেলে ফলে ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং পাতা গাছ থেকে অকালে ঝড়ে পড়ে।
বিলম্বে আসা দাগ রোগ ফেয়োইসারিওপসিস পারসোনেটা নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়। পডের পরিপক্কতা শুরু হলে এ রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে দাগগুলো বৃত্তের ন্যায় এবং আগাম দাগ রোগের চেয়ে বেশী গাঢ়। দাগগুলো কালো এবং দেখতে অনেকটা খসখসে। আক্রমন যখন বেশী হয় তখন প্রথমে পাতার সবৃজ রং নষ্ট হয়ে যায়, পড়ে শক্ত ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং সবশেষে পাতা ঝড়ে পড়ে। এক্ষেত্রেও আগাম দাগ রোগের মত পাতার বোটা, কান্ড, উপপত্রসহ পেগেও ডিম্বাকৃতি থেকে লম্বাটে দাগের সৃষ্টি হয়। চিনাবাদামের আগাম পাতার দাগ রোগ ও বিলম্বে আসা দাগ রোগের মধ্যে পার্থক্য হলো আগাম দাগ রোগের ক্ষেত্রে দাগগুলো অপেক্ষাকৃত হাল্কা রং এর হয় এবং দাগের চতুর্দিকের সবুজ রং নষ্ট হয়ে গর্তের মত ক্ষতের সৃষ্টি করে।
প্রতিকার
চিনাবাদামের মরিচা রোগ রোগ দমন
চিনাবাদামের মরিচা রোগ পাকসিনিয়া এরাচিডিস নামক ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। বিলম্বে আসা দাগ রোগ ও মরিচা পড়া রোগ সাধারণতঃ একই সাথে চিনাবাদামকে আক্রমণ করে। প্রাথমিক অবস্থায় পাতার নিচের পিঠে কমলা রঙের সামান্য উচুঁ বিন্দুর মত দাগ দেখা যায় এবং এটা ফেটে গিয়ে লাল-বাদামী রঙের স্পোর বের হয়ে আসে। আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাতার উপরের পিঠেও এ দাগ দেখা যায়। ফুল বাদে মাটির উপরের যে কোন অঙ্গে দাগ দেখা যেতে পারে। তবে কান্ডের গায়ে সৃষ্ট দাগ লম্বাকৃতির হয়। মরিচা রোগে আক্রান্ত পাতাগুলোতে ধীরে ধীরে শক্ত ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে শুকিয়ে যায় এবং গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় লেগে থাকে। গাছ এ রোগে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলে চিনাবাদামের ফলন অনেক কমে যায়।
প্রতিকার
ফসল সংগ্রহ ও বীজ সংরক্ষণ
ভাল বীজ ও গুণগতমানের বীজ পেতে হলে ফসল যথাসময়ে তুলতে হবে। ফসলের সঠিক সময় তুলতে হলে ফসলের পরিপক্কতা সম্বন্ধে যথাসময় ধারণা থাকা আবশ্যক। চিনাবাদামের বীজ খুবই সংবেদনশীল বা স্পর্শকাতর। যখন গাছের শতকরা ৮০-৯০ ভাগ চিনাবাদাম পরিপক্ক হয় তখনই চিনাবাদাম তোলার উপযুক্ত সময়। পরিপক্ক হলে বাদামের খোসার শিরা-উপশিরাগুলি স্পষ্টভাবে দেখা যায় এবং গাছের পাতাগুলি হলুদ রং ধারণ করে নিচের পাতাঝরে পড়তে থাকে। বাদামের খোসা ভাঙ্গার পর খোসার ভিতরে সাদা কালচে রং ধারণ করলেই বুঝতে হবে ফসল উঠানোর উপযুক্ত সময় হয়েছে। পরিপক্ক হবার আগে বাদাম উঠালে তা হতে ফল ও তেল উভয়ই কম হবে। আবার দেরিতে বাদাম উঠালে সুপ্ততা না থাকার দরুন জমিতেই অংকুরিত হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
জমি থেকে তোলা বাদামের গায়ে লেগে থাকা কাঁদামাটি বা বালু পরিস্কার করতে হবে। তারপর আটি গুলো উপুর করে অর্থাৎ বাদাম গুলো উপরের দিকে রেখে গাছের মাথা শুকনো মাটিতে বসিয়ে রৌদ্রে শুকাতে হবে। এতে বাদামের গায়ে লেগে থাকা পানি ঝরে যাবে। পরে গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়ে উজ্জ্বল রোদে দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা করে ৫-৬ দিন শুকাতে হবে। এ অবস্থায় বীজের আর্দ্রতা ৮-১০% হয়ে থাকে। শুকানোর পর খোসাসহ বাদাম ঠান্ডা করে পলিথিন আচ্ছাদিত চটের বস্তায় মাচার উপর সংরক্ষণ করতে হবে।
ফলন
গড় ফলন: (১) রবি রোপণ- ২.৭৭ ও (২) খরিফ-২ রোপন-২.১০ টন/হে.
প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুনঃ
(সকাল ৯ টা-বিকাল ৫টা)
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম ও পদবী
ড. সাকিনা খানম
মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বিভাগীয় প্রধান
ক্রপ ফিজিওলজি বিভাগ
বিনা, ময়মনসিংহ-২২০২
কল করুনঃ +৮৮০১৭৩১-৫৫৬২৩২
ই-মেইলঃ sakina_71@hotmail.com