জাতের নামঃ |
ইরাটম২৪ |
জাতের বৈশিষ্ট্যঃ |
এটি একটি মধ্যম স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন জাত। জীবনকাল বোরো মৌসুমে ১৪০-১৫০ দিন ও আউশ মৌসুমে ১২৫-১৩০ দিন। গাছ মাঝারী আকারের লমবা (৮০-৮৫ সেমি) জাতটি পাতা পোড়া রোগ প্রতিরোধী। প্রতি গুছিতে কুশির সংখ্যা ১৭-২০ টি, ছড়া ২১ সে.মি. লম্বা ও ১৪০-১৫০ টি ধান ধরে । চাল মাঝারী সরু ও লম্বা। চালে এ্যামাইলোজের পরিমাণ ২৬-২৮% ও আমিষের পরিমাণ ৮.২১-৮.৩৮%। ভাত সহজে নষ্ট হয় না। |
জমি ও মাটিঃ |
বেলে দো-আঁশ এবং এটেল দো-আঁশ জমি ইরাটম-২৪ চাষের উপযোগী । |
জমি তৈরীঃ |
জাতটির চাষাবাদ পদ্ধতি অন্যান্য উফশী রোপা আমন জাতের মতই। |
বপণের সময়ঃ |
বোরোঃ নভেম্বর মাসের ৩য় সপ্তাহ হতে ডিসেম্বরে ৩য় সপ্তাহ (অগ্রহায়ণের ১ম সপ্তাহ থেকে পৌষের ১ম সপ্তাহ) । আউশঃ ১ থেকে ২১ এপ্রিল (চৈত্রের ৩য় সপ্তাহ হতে বৈশাখের ১ম সপ্তাহ) । |
বীজ হার ঃ |
ভারী দেখে বীজ বাছাই করে ৫ শতাংশ বীজ তলায় ১০ কেজি বীজ বপন করলে এ চারা দিয়ে প্রায় ১ একর জমি রোপন করা যায়। |
বীজ শোধন ঃ |
উপযুক্ত ফলন নিশ্চিত করতে হলে পুষ্ট ও রোগবালাই মুক্ত বীজ ব্যবহার করতে হবে। প্রতি ১০ কেজি বীজ শোধনের জন্য ২৫ গ্রাম ভিটাভ্যাক্স-২০০ ব্যবহার করলে ভাল হয়। |
সার ও প্রয়োগ পদ্ধতিঃ |
প্রতি হেক্টরেঃ বীজ তলার জন্য উর্বর ও স্বল্প উর্বর জমিতে বীজতলা তৈরী করলে কোনরূপ সার প্রয়োজন হয়না। অনুর্বর ও স্বল্প উর্বর জমিতে কেবল দুই কেজি পঁচা গোবর বা আবর্জনা সার প্রয়োগ করলেই চলে। চারা গজানোর পর গাছ হলুদ হয়ে গেলে দু’সপ্তাহ পর প্রতি বর্গ মিটারে ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের পর জমি থেকে পানি নিষ্কাশণ করা যাবেনা। শীতের কারনে চারা লালচে বা হলুদ হয়ে যায়, যাকে টুংরো রোগ বলে অনেকেই ভুল করেন। এ ক্ষেত্রে ইউরিয়া প্রয়োগে কাজ না রোপা ক্ষেতের জন্য ইউরিয়াঃ ১০০-১২০ কেজি, টিএসপিঃ ৫০-৬০ কেজি, এমওপিঃ ৫০-৭০ কেজি, জিপসামঃ ৩০-৪৫ ও দসত্মাঃ ২.০-৩.০ কেজি। প্রয়োগের নিয়মঃ রোপার জন্য জমি তৈরীর শেষ চাষের আগে সম্পূর্ণ টিএসপি এবং এমওপি জমিতে সমভাবে ছিটিয়ে চাষের মাধ্যমে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সারের অর্ধেক পরিমাণ চারা রোপনের ৭-৮ দিন পর, এবং বাকি অর্ধেক ৩০-৩৫ দিন পর জমির উর্বরতার উপর নির্ভর করে প্রয়োগ করতে হবে। ইউরিয়া সার প্রয়োগের ২/১ দিন আগে জমির অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে এবং প্রয়োজন হলে আগাছা দমন করতে হবে। জমির উর্বরতা ও ফসলের অবস্থার উপর নির্ভর করে ইউরিয়া সার প্রয়োগ মাত্রার তারতম্য করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে টিএসপি ও দসত্মা সার একই সাথে প্রয়োগ করা যাবেনা। তাই এক্ষেত্রে একচাষ পূর্বে টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে এবং শেষ চাষের সময় ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার ছিটিয়ে প্রয়োগ করা অবশ্যক। |
সেচ ও নিষ্কাশনঃ |
জমি তৈরীর সময় ২/৩ বার স্বাদু পানি দিয়ে লবণাক্ত পানি বের করে দিলে জমির লবণাক্ততা অনেকটা কমে যায়। তাছাড়া কুশি, ফুল আসা ও পরিপক্কতার সময় লবণের মাত্রা ১০ ডিএস/মিটারের বেশী হলে স্বাদু পানি দিয়ে লবণাক্ততা কমিয়ে আনতে হবে। ধান পাকার ১০-১২ দিন আগে জমির পানি শুকিয়ে ফেলা ভাল। |
আগাছা দমন ও মালচিংঃ |
চারা রোপনের পর আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী বা হাতের সাহায্যে আগাছা পরিষ্কার এবং মাটি নরম করে মালচিং করতে হবে । |
বালাই ব্যবস্থাপনাঃ |
এ জাতটি পাতা পোড়া রোগ মধ্যম প্রতিরোধী। রোগবালাই ও কীট পতঙ্গের আক্রমণ দেখা দিলে নিকটস্থ কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার উপদেশ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। পেকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে প্রচলিত তরল বা দানাদার কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে রোগবালাই যেমন- খোলা ঝলসানো দেখা দিলে -হোমাই ৮০ ডব্লিইপি বা টিলট একর প্রতি ১ -১.২ কেজি হারে ১০০ লিটার পানিতে মিশিয়ে থোড় আসার সময় বা তার পর পরই স্প্রে করা যেতে পারে। এছাড়া ব্লস্ট রোগ দমনের জন্য হিনোসান ৫০ ইসি বা টপসিন মিথাইল ৮০ মিলি ৬০-১০০ লিটার পানিতে ২৫ শতাংশ জমিমে স্প্রে করা যেতে পারে। পোকামাকড় দমনের জন্য আই পি এম পদ্ধতি ভাল। জমিতে মাজরা পোকা, পাতা পোষক পোকা, ফড়িং বা অন্যান্য কীট পতঙ্গের আক্রমণ হলে ডায়াজিনন-১০ (দানাদার) একর প্রতি ৬.৮ কেজি হারে ছিটিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে বা সবিক্রন-৪২৫ ইসি ২০ মি.লি. ১০ লিটার পানিতে মিশ্রিত করে ২০০ বর্গ মি. (৫ শতাংশ) জমিতে স্প্রে করা যেতে পারে। |
হেক্টর প্রতি ফলনঃ |
গড় ফলন বোরো মৌসুমে ৬.৫ টন/হেক্টর এবং আউশ মৌসুমে ৩.৫ টন/হেক্টর । |
প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন ধান ফসল বিশেষজ্ঞ |
(সকাল ৯ টা-বিকাল ৫টা) কলকরুনঃ +৮৮০১৭১১৬২৮০৭২১ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম ও পদবী |
চিত্র: ইরাটম-২৪ এর মাঠ এবং বীজ