জাতের নামঃ
বিনা চিনাবাদাম১১
জাতের বৈশিষ্ট্যঃ
জমি ও মাটিঃ
চরাঞ্চল, পাহাড়ী ও লবণাক্ত এলাকাসহ সারাদেশে চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত। বেলে, বেলে-দো-আঁশ, দো-আঁশ, এঁটেল-দো-আঁশ মাটি এ জাত চাষের জন্য উপযোগী।
জমি তৈরীঃ
৩-৪টি চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালভাবে তৈরি করে নিতে হবে।
বপণের সময়ঃ
রবি মৌসুম: ১৫ই ডিসেম্বর হতে ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত (পহেলা পৌষ হতে পহেলা ফাল্গুন)
খরিফ-২ মৌসুম: এলাকাভেদে ১লা জুলাই হতে ৩০শে সেপ্টেম্বরের পর্যন্ত (১৫ই আষাঢ় হতে ১৫ই আশ্বিন)
বীজ হারঃ
প্রতি হেক্টর জমির জন্য ১৪০-১৫০ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। প্রতি বিঘাতে ১৮-২০ কেজি।
বীজ শোধনঃ
লাগানোর আগে বীজ শোধন করে নিলে ভাল হয়। প্রতি ৪০০ গ্রাম বীজের জন্য ১ গ্রাম প্রোভ্যক্স/ অটোস্টিন/ নোয়িন নামক বীজ শোধনকারী ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হবে। শোধিত বীজ জমিতে বপন করলে চারা গজানোর হার বেড়ে যায়।
সার ও প্রয়োগ পদ্ধতি:
সার |
প্রতি হেক্টরে (কেজি) |
প্রতি একরে (কেজি) |
ইউরিয়া |
৪০-৫০ |
১৬-২০ |
টিএসপি |
১৬৫-১৭৫ |
৬৭-৭১ |
এমওপি |
১৩০-১৪০ |
৫৩-৫৭ |
জিপসাম |
১১০-১২০ |
৪৫-৪৯ |
জীবাণুসার বীজের সাথে মিশিয়ে দিতে হবে (ইউরিয়ার পরিবর্তে) |
২.২ |
১.০ |
দস্তা (জিংক সালফেট) |
২.৫-৫.০ |
১.০-২.০ |
বোরন |
৩.০-৫.০ |
১.২-২.০ |
মলিবডেনাম |
১.০-১.৫ |
০.৪-০.৬ |
অর্ধেক ইউরিয়া এবং অন্যান্য সকল সার বীজ বপনের আগে শেষ চাষের সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বপনের ৪০ থেকে ৫০ দিন পর গাছে ফুল আসার সময় প্রয়োগ করতে হবে। তবে প্রতি কেজি বীজে ৪০ গ্রাম অণুবীজ সার ব্যবহার করলে করলে ইউরিয়া সার দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
সেচ ও নিষ্কাশনঃ
বাদামে সাধারণত সেচের প্রয়োজন হয় না তবে মাটি অধিক শুষ্ক হলে বা অতিরিক্ত খরায় গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে ১ বার পানি সেচের প্রয়োজন হয়। বৃষ্টিতে জমিতে পানি জমলে অতিদ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যাবস্থা নিতে হবে।
আগাছা দমনঃ
চিনাবাদাম রোপনের পর গাছ ৩-৪ পাতা বিশিষ্ট হওয়ার পর প্রথমম বার এবং ফুল আসার পূর্বে দ্বিতীয় বার আগাছা থাকলে নিড়ানী দিতে হবে ও মাটি আলগা করে দিতে হবে।
ক্ষতিকর রোগ ও পোকামাকড় দমন
পিপিঁলিকা দমন
জমিতে বাদাম লাগানোর পরপর পিপিঁলিকা আক্রমণ করে রোপিত বাদামের দানা সব খেয়ে ফেলতে পারে। এ জন্য বাদাম লাগানো শেষ হলেই ক্ষেতের চারিদিকে সেভিন ডাস্ট ছিটিয়ে দিতে হবে। এছাড়া ক্ষেতের চারিদিকে লাইন টেনে কেরোসিন তেল দিয়েও পিপিঁলিকা দমন করা যায়।
উইপোকা দমন
উইপোকা চিনাবাদাম গাছের এবং বাদামের যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে। এরা বাদাম গাছের প্রধান শিকড় কেটে দেয় এবং শিকড়ের ভিতর গর্ত সৃষ্টি করে। ফলে গাছ মারা যায়। উইপোকা মাটির নিচের বাদামের খোসা ছিদ্র করে বীজ খায়।
প্রতিকার
চিনাবাদামের বিছা পোকা, জ্যাসিড বা পাতা হপার এবং জাব পোকার সমন্বিত দমন ব্যবস্থা
চিনাবাদামের পাতার আগাম দাগ রোগ ও বিলম্বে আসা দাগ রোগ দমন
পাতার আগাম দাগ রোগ সারকোস্পোরা এরাচিডিকোলা নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ সৃষ্ট হয়। আবহাওয়ার উপর ভিত্তি করে এ রোগ রোপনের ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে দেখা দিতে পারে। এ রোগের ফলে পাতার উপরিভাগে গাঢ় বাদামী রং এর উপবৃত্তাকার দাগ এবং পাতার নীচের দিকে হাল্কা বাদামী রং এর ছাপ পড়ে। পাতার যখন রোগের আক্রমন খুব বেশী হয় তখন ছোট ছোট উপবৃত্তাকার দাগ গুলো মিলে বড় দাগের সৃষ্টি হয়ে পাতার সবুজ রং নষ্ট করে ফেলে ফলে ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং পাতা গাছ থেকে অকালে ঝড়ে পড়ে।
বিলম্বে আসা দাগ রোগ ফেয়োইসারিওপসিস পারসোনেটা নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ সৃষ্টি হয়। পডের পরিপক্কতা শুরু হলে এ রোগের আক্রমণ দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে দাগগুলো বৃত্তের ন্যায় এবং আগাম দাগ রোগের চেয়ে বেশী গাঢ়। দাগগুলো কালো এবং দেখতে অনেকটা খসখসে। আক্রমন যখন বেশী হয় তখন প্রথমে পাতার সবৃজ রং নষ্ট হয়ে যায়, পড়ে শক্ত ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং সবশেষে পাতা ঝড়ে পড়ে। এক্ষেত্রেও আগাম দাগ রোগের মত পাতার বোটা, কান্ড, উপপত্রসহ পেগেও ডিম্বাকৃতি থেকে লম্বাটে দাগের সৃষ্টি হয়। চিনাবাদামের আগাম পাতার দাগ রোগ ও বিলম্বে আসা দাগ রোগের মধ্যে পার্থক্য হলো আগাম দাগ রোগের ক্ষেত্রে দাগগুলো অপেক্ষাকৃত হাল্কা রং এর হয় এবং দাগের চতুর্দিকের সবুজ রং নষ্ট হয়ে গর্তের মত ক্ষতের সৃষ্টি করে।
প্রতিকার
চিনাবাদামের মরিচা রোগ রোগ দমন
চিনাবাদামের মরিচা রোগ পাকসিনিয়া এরাচিডিস নামক ছত্রাকের কারণে এ রোগ হয়ে থাকে। বিলম্বে আসা দাগ রোগ ও মরিচা পড়া রোগ সাধারণতঃ একই সাথে চিনাবাদামকে আক্রমণ করে। প্রাথমিক অবস্থায় পাতার নিচের পিঠে কমলা রঙের সামান্য উচুঁ বিন্দুর মত দাগ দেখা যায় এবং এটা ফেটে গিয়ে লাল-বাদামী রঙের স্পোর বের হয়ে আসে। আক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে পাতার উপরের পিঠেও এ দাগ দেখা যায়। ফুল বাদে মাটির উপরের যে কোন অঙ্গে দাগ দেখা যেতে পারে। তবে কান্ডের গায়ে সৃষ্ট দাগ লম্বাকৃতির হয়। মরিচা রোগে আক্রান্ত পাতাগুলোতে ধীরে ধীরে শক্ত ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে শুকিয়ে যায় এবং গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় লেগে থাকে। গাছ এ রোগে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হলে চিনাবাদামের ফলন অনেক কমে যায়।
প্রতিকার
ফসল সংগ্রহ ও বীজ সংরক্ষণ
ভাল বীজ ও গুণগতমানের বীজ পেতে হলে ফসল যথাসময়ে তুলতে হবে। ফসলের সঠিক সময় তুলতে হলে ফসলের পরিপক্কতা সম্বন্ধে যথাসময় ধারণা থাকা আবশ্যক। চিনাবাদামের বীজ খুবই সংবেদনশীল বা স্পর্শকাতর। যখন গাছের শতকরা ৮০-৯০ ভাগ চিনাবাদাম পরিপক্ক হয় তখনই চিনাবাদাম তোলার উপযুক্ত সময়। পরিপক্ক হলে বাদামের খোসার শিরা-উপশিরাগুলি স্পষ্টভাবে দেখা যায় এবং গাছের পাতাগুলি হলুদ রং ধারণ করে নিচের পাতাঝরে পড়তে থাকে। বাদামের খোসা ভাঙ্গার পর খোসার ভিতরে সাদা কালচে রং ধারণ করলেই বুঝতে হবে ফসল উঠানোর উপযুক্ত সময় হয়েছে। পরিপক্ক হবার আগে বাদাম উঠালে তা হতে ফল ও তেল উভয়ই কম হবে। আবার দেরিতে বাদাম উঠালে সুপ্ততা না থাকার দরুন জমিতেই অংকুরিত হয়ে নষ্ট হয়ে যাবে।
জমি থেকে তোলা বাদামের গায়ে লেগে থাকা কাঁদামাটি বা বালু পরিস্কার করতে হবে। তারপর আটি গুলো উপুর করে অর্থাৎ বাদাম গুলো উপরের দিকে রেখে গাছের মাথা শুকনো মাটিতে বসিয়ে রৌদ্রে শুকাতে হবে। এতে বাদামের গায়ে লেগে থাকা পানি ঝরে যাবে। পরে গাছ থেকে বাদাম ছাড়িয়ে উজ্জ্বল রোদে দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা করে ৫-৬ দিন শুকাতে হবে। এ অবস্থায় বীজের আর্দ্রতা ৮-১০% হয়ে থাকে। শুকানোর পর খোসাসহ বাদাম ঠান্ডা করে পলিথিন আচ্ছাদিত চটের বস্তায় মাচার উপর সংরক্ষণ করতে হবে।
ফলনঃ
গড় ফলন: ২.৭১ টন/ হেক্টর (রবি) ও ২.০৭ টন/ হেক্টর (খরিফ-২)
প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুনঃ
(সকাল ৯ টা-বিকাল ৫টা)
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নাম ও পদবী
ড. সাকিনা খানম
মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং বিভাগীয় প্রধান
ক্রপ ফিজিওলজি বিভাগ
বিনা, ময়মনসিংহ-২২০২
কল করুনঃ +৮৮০১৭৩১-৫৫৬২৩২
ই-মেইলঃ sakina_71@hotmail.com