ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ বেড়েছে। এডিস মশার কারণেই ছড়ায় ডেঙ্গু। তাই ডেঙ্গু জ্বরের সংক্রমণ রোধে সচেতন হতে হবে। এ জন্য কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। সরকারের পাশাপাশি চিকিৎসক সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজসহ সবাইকে সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বর ও এডিস মশা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এডিস মশা ধ্বংস করার ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। এই কার্যক্রমেরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এর প্রধান কার্যালয়ের ড. এম. ওয়াজেদ মিয়া অডিটরিয়ামে গতকাল ২৯.০৭.২০১৯ খ্রি. তারিখ বিকাল ৩:৩০ টায় প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ড. বীরেশ কুমার গোস্বামী এর উপস্থিতিতে এডিস মশার কামড় ও ডেঙ্গু জ্বরের কবল থেকে বাঁচার জন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং সতর্কতা বিষয়ক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় বিনা’র তিনজন পরিচালকসহ প্রধান কার্যালয়ের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারি ও শ্রমিকগণ উপস্থিত ছিলেন ।
সভার শুরুতেই, মহাপরিচালক চার ধরনের এডিস মশার আক্রমনে সম্প্রতি বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রভাবের বিষয় বিস্তারিত উল্লেখপূর্বক এডিস মশা নিয়ন্ত্রনে জরুরী ভিত্তিতে সিটি কর্পোরেশনের সহায়তায় মশার নিধনের জন্য ঔষধ স্প্রে করার উপর জোর দেন। এছাড়া, তিনি বলেন এডিস মশা জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে। তাই ঘরে সাজানো ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোসা, যেকোনো পাত্র বা জায়গায় জমে থাকা পানি তিন থেকে পাঁচ দিন পরপর ফেলে দিতে হবে। এতে এডিস মশার ডিম ও লার্ভা মারা যায়। পানি পাঁচ দিনের বেশি যেন জমে না থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ঘরের অ্যাকুয়ারিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ার কন্ডিশনারের নিচে এবং মুখ খোলা পানির ট্যাংকে যেন পানি জমে না থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি এডিস মশা নিয়ন্ত্রনে ড্রেনসমূহে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
এরপর সভার উম্মুক্ত আলোচনায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (প্রশাসন ও সাপোর্ট সার্ভিস) ড. মো. আজগার আলী সরকার, পরিচালক (গবেষণা) ড. হোসনেয়ারা বেগম, পরিচালক (প্রশিঃ ও পরিকল্পণা) ড. মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা, কর্মচারি ও শ্রমিকগণ স্বতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহন করেন এবং এডিস মশা নিয়ন্ত্রনে নিম্নে উল্লেখিত মতামত/পরামর্শ প্রদান করেন।
১। উপকেন্দ্রসমূহসহ বিনা’র প্রধান কার্যালয়ের মাঠের ড্রেন হতে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নতকরণসহ আবাসিক এলাকাগুলো ও বাড়ির আশপাশের ঝোপ-ঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
২। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী জায়গাগুলো নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার রাখতে হবে।
৩। মশা নিধনের জন্য কার্যকরী ঔষধ/কীটনাশক নিয়মিতভাবে স্প্রে করতে হবে।
৪। গবেষণার কাজে বাহিরে অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত পট, ট্রে, টব ইত্যাদিতে ৩-৪ সে.মি. বৃষ্টির পানি জলাবদ্ধ থাকে বিধায় সেগুলো অপসারন করতে হবে।
৫। ডেঙ্গু প্রতিরোধক বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য উল্লেখসহ বিলবোর্ড তৈরি করা যেতে পারে। এছাড়া, ডিজিটাল ডিসপ্লে, লিফলেট এবং
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এডিস মশা ও ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির করণীয় বিষয় প্রচার-প্রচারনা চালানো প্রয়োজন।
৬। বিভাগ/শাখাওয়ারী নিয়মিত বিনা’র ল্যাবসমূহের পেট্রি-ডিশ, কনিক্যাল ফ্লাক্স, আঙ্গিনা/চত্বর সম্মিলিতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন
রাখতে হবে। এরই কার্যক্রম হিসেবে আগামীকাল ৩০.০৭.২০১৯ খ্রি. তারিখ সকাল ১০:০০ টা হতে ১১:০০ টা পর্যন্ত (১ ঘন্টাব্যাপী) সকলে
মিলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
৭। যেহেতু এডিস মশা দিনে আক্রমন করে, সেহেতু ব্যক্তিগত সচেতনতা হিসেবে দিনে বিশ্রামের সময় অবশ্যই মশারী ব্যবহার করা
উচিৎ। এছাড়া, ফুলহাতা শার্ট পরিধানসহ সম্পূর্ণ শরীর কাপড় দ্বারা আবৃত রাখা যেতে পারে।
৮। প্রতিরোধক হিসেবে মশা তাড়ানো Odomosque cream-সহ অন্যান্য মশা ধ্বংস করার মলম/ক্রিম/তেল ব্যবহার করা
যেতে পারে।
৯। কারো ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তে সন্দেহ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে হবে। রক্তের প্লাটিলেটের পরিমাণ কমে গেলে জরুরি ভিত্তিতে প্লাটিলেট দিতে হবে।
১০। প্রতিষেধক হিসেবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে পেঁপে পাতার রসসহ যথাসম্ভব বেশি পরিমানে তরল ও ভিটামিন-এ জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে।
সভার শেষ পর্যায়ে মহাপরিচালক বলেন, এডিস মশা কিংবা ডেঙ্গু জ্বর সংক্রান্ত বিপদটি সম্পূর্ণ নিজের/ব্যক্তিগত, তাই ডেঙ্গু নিধনে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে। এডিস মশা আক্রমন থেকে রক্ষা পেতে প্রত্যেকের বাড়ির চারদিকের সব জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র ফেলা যাবে না। মনে রাখতে হবে জীবন আপনার এবং আপনাকেই প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে। কোনো সমস্যা মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ এগিয়ে না এলে সরকারের পক্ষে একা সমস্যা উত্তরণ পাওয়া কঠিন। সরকার ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের ডেঙ্গু সমস্যা দূর হবে, এই প্রত্যাশা করি।